বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া প্রিয় সংগঠন ছাত্রলীগের সম্মেলন, মনে পড়ে গৌরবগাঁথা দিনের কথা। ছাত্রলীগ জয়যাত্রার সংগঠন। বর্ণিল ইতিহাসের সংগঠন। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে এর নাম স্বর্ণ খচিত। কত সংগ্রাম, কত ব্যাথা, কত দুখ-কত হাসি আর বিজয়ের গল্পমালা।
কত রক্ত, কত ত্যাগ এই সংগঠনের প্রতিপদে, প্রতিক্ষণে। কত আবেগ, কত উল্লাস অর্জনের দিনক্ষণে। তাইতো বার বার ফিরে আসে প্রানের সংগঠনের আনন্দের সম্মেলন।
প্রতি সম্মেলনে নতুন সপথ, নতুন স্বপ্ন আর অর্জনের জয়যাত্রা। নতুন নেতৃত্তের দৃঢ়লয়ে আগ্রযাত্রা। এই সম্মেলন পথ দেখায় নতুন দিনের, নতুন প্রত্যাশার। নতুন নেতৃত্ব এগিয়ে নিয়ে যায় অর্জিত কৃতিত্ব, পিছনের রঙিন ইতিহাস। সংযোজন করে ইতিহাসের নতুন পাতা। সংগ্রাম করে অধিকার আদায়ের, প্রতিবাদ করে অন্যায়ের, লালন করে নৈতিকতার আর অর্জন করে নতুন শিক্ষা।
তাই, এই সম্মেলন তাৎপর্যের। বিশ্বাস করি এই সম্মলন ছাত্রলীগকে নিয়ে যাবে বহুদূর, বহু প্রাণের সঞ্চারণে, নতুন সাম্যের গানে। তাই সুন্দর এই সম্মেলনের দিনে নয় গ্লানির কথা, নয় শত্রুর অন্যায্য সমালোচনার কথা, আমরা গাইবো এর গৌরবগাঁথা।
যুগে যুগে সম্মেলন এনেছে বীরত্তের কাহিনী
ছাত্রলীগের সম্মেলন এবং নতুন নেতৃত্ব যুগে যুগে বীর সেনানীর গৌরবোজ্জ্বল অর্জনের কথা মনে করিয়ে দেয়। কতনা বলিষ্ঠ অগ্রদূতের জন্ম দিয়েছে এই সংগঠনের পথচলা। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই মহীরুহের ছায়াতলে কত বিপ্লবি সিক্ত হয়েছে বীরত্বের মালায়, জনতার ভালবাসায়। কত বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে এর দৃঢ় পথচলায়, কত বিপ্লবি পরেছে বীরের মুকুট এই প্রতিষ্ঠানের নৈতিক চর্চায়।
তাই সম্মেলনের এই মহামিলন সঞ্চার করে নবযৌবনের, নতুনের দীপ্ত সফথের। বিশ্বাস করতে ভালোলাগে এই নতুনের দল ছাত্রলীগকে নিয়ে যাবে বহুদূর, বিনির্মাণ করবে কত সংগ্রামের পাতা, কত আলপনা এঁকে দিবে মিছিলের রাজপথে।
সেই নিরিখে ভালবাসতে কার্পণ্য কেন প্রাণের এই সংগঠনকে! এবারের সম্মেলনও জন্ম দেবে কিছু সংগ্রামী বীরের। তাই দেখতে চাই এই সম্মেলনের গ্রন্থি দিয়ে যে রক্তের সঞ্চার হবে তা যেন ছাত্রলীগকে এনে দিতে পারে বীরত্বের নতুন মুকুট, ছাত্রলীগের ললাটে আঁকতে পারে আরেকটি গৌরবগাঁথার তিলক।
কত সংগ্রাম এর পাতায় পাতায়
ছাত্রলীগ একটি সংগ্রামী প্রতিষ্ঠানের নাম। এর ইতিহাসের পরতে পরতে রয়েছে অধিকার আদায়ের সংগ্রাম, সে অধিকার ছাত্রের, কৃষকের, শ্রমিকের আর আপাময় জনতার। সবচেয়ে বড় সংগ্রাম স্বাধিকার আন্দোলনের। কি বাহান্নর ভাষা আন্দোলন কি একাত্তরের স্বাধীনতা আন্দোলন; ছাত্রলীগের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামের ইতিহাস।
পাকিস্তান আন্দোলনের সংগ্রামী অধ্যায় শেষে এবং পাকিস্তান আন্দোলনের স্বপ্নভঙ্গের প্রাক্বালে এক নতুন স্বপ্ন নিয়ে বঙ্গবন্ধু গড়ে তুলেছেলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। প্রতিষ্ঠালগ্নেই এই সংগঠন যুক্ত হয়েছিল ভাষার অধীকার আন্দোলনে। সংগ্রাম দিয়েই যে সংগঠনের যাত্রা সেটি আর বসে ছিলনা বাংলার কোনো দুর্দিনে।
শিক্ষা, শান্তি, প্রগতির পতাকা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাঙ্গালীর প্রতিটি স্বাধিকার আন্দোলনে। এজাতি মনে রাখবে বাহান্নর সে দিনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গে ছাত্রলীগের ভুমিকার কথা, একজন ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুর জেলে বসে অনশনের কথা। তাই আজকের ছাত্রলীগ প্রজন্মও বহন করছে তারই ধারাবাহিকতা।
আজও মনে পড়বে চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ছাত্রলীগের গ্রামেগঞ্জে ছুটেচলার কথা। ছাপ্পান্নর শাসনতন্ত্র আন্দোলন আর বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনে এই মহিরুহু সংগঠনের ভুমিকার কথা ভুলবার নয়। তাইতো প্রতিটি গণতন্ত্রের আন্দোলন আর ছাত্র অধীকার আন্দোলনে ছাত্রলীগ আজো সোচ্ছার। আসছে নতুন নেতৃত্বের প্রতিও একই প্রত্যাশা আমাদের, এই জাতির। আর তা পুরনেও সফল হবে বঙ্গবন্ধু মুজিবের হাতে গড়া এই সংগঠনের নতুন কাণ্ডারিরা।
এই নতুন কাণ্ডারি নিশ্চয়ই জানে বাঙ্গালীর মুক্তির সনদ ছয়দফার কথা, ছয়দফার আন্দোলনে ছাত্রলীগের জোরাল ভূমিকার কথা। বাংলার স্বায়ত্ত শাসনের এই সংগ্রামে ছাত্রলীগের সে দিনের বীর সেনানীরা রেখেছিলো বলিষ্ঠ ভূমিকা। আজকের নতুনকেও তাই অনুসরণ করতে হবে সে পথ, যেভাবে সে দিনের ছাত্রলীগ ছয়দফার প্রচারে ঘুরে বেড়িয়েছিল বাংলার পথে-প্রান্তরে।
আজকের ছাত্রলীগকে ভুলে গেলে চলবেনা কিভাবে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুথান সৃষ্টিতে ছাত্রলীগ ছিল অগ্রণী। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ রক্ষায় গড়ে তুলেছিল বিশ্বাসের বলয়। মুক্তি আন্দোলনের তীব্রতায় ভীত নাড়িয়ে দিয়েছিল পশ্চিমাদের, বাংলার মানুষ ছুটে চলছিল এক দফার স্বাধিকার আন্দোলনের দিকে। তাই সম্মেলনের এইদিনে ছাত্রলীগকে চেতনার রসদ যোগাড় করতে হবে সেখান থেকে।
এই দিনে ছাত্রলীগ স্মরণ করবে সেই বিজয়ের উচ্ছ্বাস, যেটি চরম আঘাত হেনেছিল পশ্চিমাশক্তির মনোজগতে, বলছি সত্তরের নির্বাচনের মহান বিজয়ের কথা। বঙ্গবন্ধুর সুদৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এই নির্বাচনে সুবিশাল বিজয়ে প্রত্যক্ষ অংশ গ্রহণের মাধ্যমে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলো ছাত্রলীগ। কালের দাবিতে সাড়া জাগানো ছাত্রলীগের এই গৌরবোজ্জ্বল অর্জন থেকে শিক্ষা নিবে হাজারো ছাত্রজনতার এই প্রাণের সংগঠনের এক একজন নেতা-কর্মী।
বাঙ্গালী জাতির মুক্তির সংগ্রামে শত জীবন উৎসর্গ করা ছিল ছাত্রলীগের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ অর্জন। কতবড় ত্যাগের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছিল এই সংগঠনের সে দিনের নেতৃত্ব। বাংলার রাখাল রাজা বঙ্গবন্ধু মুজিবের ডাকে সাড়া দিয়ে সে দিন অকাতরে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলো এই সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এই সংগঠনের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলার ছাত্রসমাজ জীবনযুদ্ধে মেতে উঠেছিলো গ্রাম-গঞ্জ আর বাংলার আনাছে-কানাছে। বাংলার দামাল ছেলেরা ছিনিয়ে এনেছিলো লাল-সবুজের পতাকা। আজের ছাত্রলীগও নিশ্চয় মনে-প্রাণে ধারন করে সেই ত্যাগের শিক্ষা।
এতো অর্জনের পরও ছাত্রলীগকে সহ্য করতে হয়েছিলো পিতৃ-হারানোর বেদনা। তবুও ছাত্রলীগ ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, হায়নার ছোবল দুর্বল করতে পারেনি বঙ্গবন্ধুর আদরে বড় হওয়া এই সংগঠনকে। কিভাবে পারবে, এর শিরায় শিরায় যে ছিল বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, নৈতিকতা, বিপ্লবের চেতনা আর সাম্যের গান। তাইতো স্বৈরাচারের কালো থাবাও দাবিয়ে রাখতে পারেনি এই মহিরুহুকে। আবারো ছাত্রলীগ রক্ত ঢেলেছে জাতির মুক্তির জন্য। স্বৈরাচারের করাল গ্রাস থেকে উদ্ধার করেছে জাতিকে। সকল কালো অধ্যায়ে জাতির জন্য ত্রাতা হয়ে বুক পেতেছে সবার আগে এই ছাত্রলীগ।
আজো তাই লড়ছে যুদ্ধবিরোধীদের প্রেতাত্মার বিরুদ্ধে। সংগ্রাম করছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে। বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের প্রাণের এই সংগঠন তাই আজকের এই সম্মেলনের দিনে নতুন করে সফথ নেবে গনতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার।
নয় কালিমা, দেখ এর গৌরবগাঁথা
ছাত্রলীগকে তাঁর গৌরবোজ্জ্বল পথে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সম্মুখীন হতে হয়েছে হাজারো বাধার। এর প্রতি পদে ছিল কাঁটার আঘাত। সকল বাধা-বিপত্তি দুহাতে ঠেলে বিজয়ের পথে এগিয়ে গেছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের কাছে বার বার হেরে যাওয়া প্রতিপক্ষের দল দেখা দিয়েছে শত্রুরূপে।
সম্মুখযুদ্ধে পরাজিত হায়নার দল আজো পিছু ছাড়েনি। আজো অপপ্রচারে লিপ্ত ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে, লিপ্ত প্রতি মুহূর্তের ষড়যন্ত্রে। কালিমা লেপনে ব্যাস্ত এই বটবৃক্ষ ছাত্র সংগঠনের মুখে। আজকের দিনের সম্মেলনে তাই ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্বকে সফথ নিতে হবে এই অপশক্তিকে প্রতিহত করার।
আর তথাকথিত সুশীলের নিরর্থক সমালোচনার সমুচিত জবাব দেয়ার জন্য তৈরি থাকতে হবে সদা-সমুজ্জল ছাত্রলীগকে। সুবিশাল বটবৃক্ষের হাজারো সবুজ পাতার মাজে দু-চারটে শুখনো পাতা থাকলেও থাকতে পারে। তবে সে গুলো যতটুকু শুখনো ততটুকুই দেখা উচিত, তাঁর চেয়ে বেশী দেখলে সবুজ পাতা জীবন বাঁচাতে যে অক্সিজেন বিতরণ করে তাকে খাটো করা হয়। শত্রুরদল আজ তাই করছে।
যদিও এরূপ সত্যের অপলাপ দিয়ে ছাত্রলীগের অর্জনকে খাটো করা যায়না। তদোপুরি, আজকের ছাত্রলীগ দীপ্ত সফথে বলিয়ান হবে আসছে দিনে সকল অন্যায় থেকে দূরে থাকার। তাই আসুন, কোনো অন্যায় কালিমা লেপন নয়, ছাত্রলীগের অর্জিত হাজারো গৌরবগাঁথার কথা বলি।
চল তবে দৃঢ় পায়ে
সকল ঝরা আর অপশক্তির ব্যাঙ্গোক্তি পিছনে ফেলে ছাত্রলীগ এগিয়ে যাক সামনের দিকে, বিজয়ের পতাকা হাতে, সমৃদ্ধ এক বাংলাদেশ গড়ার পথে। নৈতিকতার শক্তি গায়ে, ছাত্রলীগ-চল তবে দৃঢ় পায়ে। নতুন সফথে পরাজিত শক্তির মুখ হউক রুদ্ধ, জয়বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু।